পলাশ গাছ: প্রজাতি, বিরল ভ্যারাইটি, সাদা পলাশের গুরুত্ব ও লোকবিশ্বাস

Bangla Pulse
By -
0

 

পলাশ গাছ: প্রজাতি, বিরল ভ্যারাইটি, সাদা পলাশের গুরুত্ব ও লোকবিশ্বাস



পলাশ গাছের তিন রঙের ফুল: সাদা, হলুদ ও কমলা - Butea monosperma, বিরল ভ্যারাইটি

পলাশ (Butea monosperma), শীতের শেষে এই গাছের পাতা ঝরে যায় এবং বসন্তকালে অর্থাৎ ফাল্গুন-চৈত্র মাসে / ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলে এই গাছের অপরূপ সুন্দর ফুল ফুটে ওঠে, একেবারে খালি ডালে আগুনের শিখার মত উজ্জ্বল কমলা-লাল ফুল ফোটে। মনে হয় যেন পুরো বন আগুনে জ্বলছে। তাইতো ইংরেজিতে একে বলা হয় "Flame of the Forest"। ভারতের গ্রামীণ ও সাংস্কৃতিক জীবনে এর বিশেষ স্থান রয়েছে।

উজ্জ্বল কমলা-লাল পলাশ ফুলই সাধারণত আমরা দেখি, তবে কিছু বিরল ভ্যারাইটি যেমন হলুদ পলাশ ও সাদা পলাশও আছে। বিশেষত সাদা পলাশকে ঘিরে রয়েছে বহু কাহিনি, আচার ও লোকবিশ্বাস। আজ আমরা জানবো পলাশ গাছের প্রজাতি, বিরল রঙের ভ্যারাইটি, সাদা পলাশের দাম ও গুরুত্ব, এবং ছেলে সন্তান লাভের বিশ্বাসের পেছনের সত্য।


পলাশ গাছের প্রজাতি ও বিভিন্ন ভ্যারাইটি

বোটানিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে পলাশের মূলত একটিই প্রজাতি রয়েছে—Butea monosperma। তবে ফুলের রঙের ভিত্তিতে তিনটি ভ্যারাইটি চিহ্নিত করা হয়ঃ

orange palash Butea monosperma flame of the forest flowers
পলাশের প্রচলিত রঙ, "Flame of the Forest" নামে পরিচিত।

  • কমলা/লাল পলাশ – সর্বাধিক প্রচলিত, বনজ ও গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাভাবিকভাবে জন্মায়।
yellow palash Butea monosperma var lutea flowers
হলুদ পলাশ (var. lutea)–অন্য একটি বিরল রঙের ভ্যারাইটি।

  • হলুদ পলাশ (var. lutea) – বিরল, উদ্যানতাত্ত্বিক শৌখিন গাছ হিসেবে চাষ হয়।
Butea monosperma albiflora white palash flower close-up
সাদা পলাশের স্বতন্ত্র ফুলের নৈকট্যদৃশ্য—প্রাকৃতিক মিউটেশনের ফলাফল।

white palash tree branch Butea monosperma albiflora
সাদা পলাশের ডাল ও ফুল—এটির বিরলতা ও সৌন্দর্যের দৃষ্টান্ত।

  • সাদা পলাশ (var. albiflora) – সবচেয়ে দুর্লভ, ফুলের রঙ সাদা বা ক্রিম রঙের ও হয়ে থাকে।

নীল পলাশের সত্য

প্রকৃতিতে কোনো নীল পলাশ নেই। অনেক সময় ডিজিটাল এডিট করা ছবি বা Jacaranda গাছের নীল-বেগুনি ফুলকে ভুল করে "Blue Palash" বলা হয়। আসল পলাশের প্রাকৃতিক রঙ কমলা, হলুদ ও সাদা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।


সাদা পলাশ এত দামি কেন?

  • দুর্লভতা: প্রাকৃতিকভাবে খুব কম জন্মায়।
  • বীজ অঙ্কুরোদগম: চারাগাছ তৈরি কঠিন।
  • ধর্মীয় ব্যবহার: কিছু পূজা ও আচার্যে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
  • সংগ্রাহক চাহিদা: উদ্যানপ্রীতির জন্য উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়।
  • বাজারমূল্য: চারা ৫০০–১৫০০ টাকা, বড় গাছ কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

সাদা পলাশের উৎপত্তি

এটি মানুষের তৈরি নয়। প্রাকৃতিক জেনেটিক মিউটেশনের ফলে সাধারণ পলাশে রঙের পিগমেন্ট কম উৎপাদিত হয়, ফলে ফুল সাদা হয়। আজকাল নার্সারিতে গ্রাফটিং ও কাটিং পদ্ধতিতে এর সংখ্যা বাড়ানো হয়।


ছেলে সন্তান লাভের বিশ্বাস

গ্রামীণ লোকবিশ্বাস ও কিছু তান্ত্রিক প্রথা অনুসারে সাদা পলাশকে ছেলে সন্তান লাভের প্রতীক ধরা হয়।

  • ধর্মীয় আচার: ফুল বা ডাল দিয়ে পূজা করলে পুত্রলাভ হয় বলে বিশ্বাস।
  • বাস্তবতা: বৈজ্ঞানিকভাবে এটি প্রমাণ করা যায়নি, কারণ ছেলে-মেয়ে হওয়াটা ক্রোমোজোম দ্বারা নির্ধারিত।

সবশেষে বলা যায়

পলাশ গাছ শুধু একটি সুন্দর গাছ নয়, বরং ভারতের সংস্কৃতি, লোকবিশ্বাস ও জীববৈচিত্র্যের এক মূল্যবান অংশ। কমলা, হলুদ ও সাদা এই তিন রঙের পলাশ আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়ায়। নীল পলাশ কেবল কল্পনা, আর ছেলে সন্তান লাভের বিশ্বাসটি ধর্মীয় কাহিনি মাত্র। সাদা পলাশ সংরক্ষণ ও চাষে উদ্যোগ নিলে এই দুর্লভ সৌন্দর্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মও উপভোগ করতে পারবে।


Image Credit- Wikipedia Commons

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!