🌿 বাস্তু মতে কোন গাছ কোথায় লাগালে শুভ ফল মেলে — সম্পূর্ণ সাজানো ব্যাখ্যা
বাস্তুশাস্ত্রে শুধু আমরা নয়, আমাদের পাশাপাশি আরও একটা জিনিস থাকে সেটা হলো আমাদের আশেপাশে বিভিন্ন গাছপালা। গাছপালাকেও জীবন্ত শক্তি হিসেবে ধরা হয়। যা খুব সূক্ষ্মভাবে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে—
কখনো মস্তিষ্ককে শান্ত করে, কখনো বাড়ির এনার্জি বাড়ায়, আবার কখনো ভুল জায়গায় রাখলে সমস্যাও তৈরি করে।
আজকাল বাড়িঘর ছোট হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা বেশিরভাগ সময় ছোট ফুলগাছ লাগিয়েই সন্তুষ্ট থাকি। কিন্তু বাস্তুর দৃষ্টি থেকে দেখলে এটা এক ধরনের এনার্জি অপচয়— কারণ গাছের শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো প্রয়োজন।
📍 জায়গাটাকে ৮ ভাগে ভাগ করি
- উত্তর
- দক্ষিণ
- পূর্ব
- পশ্চিম
- উত্তর–পূর্ব
- দক্ষিণ–পূর্ব
- দক্ষিণ–পশ্চিম
- উত্তর–পশ্চিম
🌱 উত্তর দিক – কালপুরুষের মাথা, তাই হালকা শক্তির গাছ
উত্তর দিক সর্বাধিক সংবেদনশীল।
এখানে ভারী বা বিশাল গাছ কখনো রাখা যাবে না, যেমন—
বটগাছ
অশ্বত্থ গাছ
বড় আকারের বনসাই
বনসাই আসলে গাছকে আটকে রাখা— তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করা। তাই বনসাই উত্তর দিকে রাখলে চিন্তাভাবনায় অস্থিরতা, স্নায়বিক সমস্যা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।
✔ উত্তর দিকের জন্য উপযুক্ত গাছ
যে গাছ হালকা প্রকৃতির এবং ফুল দেয়—
হালকা নীল, সাদা বা হালকা গোলাপি রঙের ফুলওয়ালা গাছ
স্বর্ণচাঁপা (গোল্ডেন রঙ – বৃহস্পতির প্রতীক) → সবচেয়ে শুভ
এই দিক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
🔥 দক্ষিণ–পূর্ব (অগ্নিকোণ) – কাঁটাযুক্ত গাছ
এই দিক আগুন বা তেজের প্রতীক।
যেসব গাছ কম জল খায় এবং কাঁটাযুক্ত, তারা প্রাকৃতিকভাবে রোদে বাঁচে। তাই—
✔ দক্ষিণ–পূর্বের জন্য উপযুক্ত
বেলগাছ
লেবু গাছ
মনসাগাছ
যেকোনো কাঁটাযুক্ত গাছ
এগুলো এখানে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক ফল দেয়।
🌞 পূর্ব দিক – সূর্য, সুনাম, ভালো সম্পর্ক
পূর্ব দিক হলো সূর্যের দিক— যা মানুষকে উন্নতি, পরিচিতি ও শুভ যোগাযোগ এনে দেয়।
✔ এখানে লাগাতে হবে
গুল্মজাতীয় গাছ / ঝোপ জাতীয় গাছ
(কিন্তু আগাছা যেন না হয়)
এগুলো প্রচুর পাতা দেয় → উন্নতি ও শুভ লোকের সংস্পর্শ বাড়ায়।
❗ গুরুত্বের জায়গা
গাছ যেন ছাঁটা থাকে, নোংরা বা এলোমেলো না হয়
না হলে অযাচিত, অপ্রয়োজনীয় মানুষের যোগাযোগ বাড়ে
গাছ পরিচ্ছন্ন থাকলে জীবনে “ভালো লোকের” সঙ্গ বাড়ে
🪨 দক্ষিণ–পশ্চিম (পিতৃস্থান / আর্থ এলিমেন্ট) – গাছ একদমই নয়
বিশ্বকর্মা প্রকাশ, যেটাকে বলা হয় বাস্তুর বেদ তা অনুসারে- দক্ষিণ–পশ্চিম স্থিতিশীলতা, দায়িত্ববোধ, ব্যক্তিত্ব এবং পরিবারের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে।
এই দিক মাটির শক্তি (Earth Element) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
❗ এখানে কখনো গাছ লাগানো যাবে না
কারণ—
গাছ শিকড় বাড়ালে মাটির স্থিরতা ভেঙে যায়
এর ফলে জীবনে স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়
ব্যক্তিত্ব দুর্বল হয়
সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে
লোকের কাছে গুরুত্ব কমতে থাকে
যদি আগে থেকেই গাছ থাকে এবং বাড়ি থেকে দূরে থাকে → সমস্যা নেই।
কিন্তু নতুন করে গাছ লাগানো কঠোরভাবে নিষেধ।
🌤 পশ্চিম দিক – ভারী গাছ নয়
পশ্চিম দিকেও নতুন করে কোনো গাছ লাগানো ঠিক নয়।
যদি খুব প্রয়োজন হয় তবে—
সিজনাল বা মৌসুমি গাছ
অবশ্যই বাড়ি থেকে দূরে
🍃 উত্তর–পশ্চিম – হালকা কিন্তু শক্তিশালী গাছ
এখানে যেসব গাছ অল্প জায়গায় হয় এবং খুব ভারী নয়, সেগুলো উপযুক্ত।
✔ ভালো গাছ
সুপারি গাছ
এটি দেখতে সলিড হলেও অল্প জায়গায় হয় এবং শুকনো ধরনের ফল দেয় → তাই খুব শুভ।
✔ সুপারি পূর্ব দিকেও লাগানো যায়।
❗ কিন্তু দক্ষিণ–পশ্চিমে নয়।
🏡 বাড়িতে খোলা জায়গা না থাকলে কি করবেন?
অনেকের বাড়ির চারপাশে জায়গা ছোট বা একদমই নেই।
সে ক্ষেত্রে ভার্চুয়ালি সুফল পাওয়া যায়।
✔ পূর্ব দিকের দেওয়ালে
সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি
সবুজের ভিতর সূর্যের আলো
❗ ছবি বা ওয়ালে কখনো হলুদ রঙ যেন না থাকে।
হলুদ = মাটি, যা পূর্ব দিকে নিষিদ্ধ।
🌱 অ্যালোভেরা কোন দিক?
অ্যালোভেরা যেহেতু জলীয়, নরম এবং একেবারে ঔষধি গুণে ভরপুর—
✔ উত্তর পূর্ব দিকেই রাখা উচিত।
কারণ—
এই দিকের দেবতা “প্রজ্যন্ন” উৎপাদনশীলতা, মনোসংযোগ ও চিন্তাশক্তি বাড়ান
বাড়ির মেয়েদের স্বাস্থ্যে ও উৎপাদনশীলতায় উন্নতি
ছেলেদের চিন্তাভাবনায় স্বচ্ছতা ও বিশদভাবে ভাবার ক্ষমতা বৃদ্ধি
টবে করে রাখলেই যথেষ্ট।
🏬 ছাদে কি একই নিয়ম?
হ্যাঁ, একই নিয়ম।
বিশেষ করে—
✔ দক্ষিণ–পশ্চিম দিক একদম খালি রাখতে হবে।
এখানে চাইলে—
ছোট রঙিন পাথর রাখা যায় → এতে জায়গা ব্যালেন্স হয়।
🔚 শেষ কথা
গাছ লাগানো ভালোবাসা বা আবেগের ব্যাপার হলেও—
যেখানে সেখানে তার লাগিয়ে দেওয়া যাবে না,
বাস্তু মতে গাছকে সঠিক দিক অনুযায়ী লাগালে তার শক্তি আমাদের জীবনে শুভ ফল দেয়।
ভুল দিক নির্বাচন করলে একই গাছই সমস্যার কারণ হতে পারে।
গাছকে ভালোবাসো, কিন্তু বাস্তু অনুযায়ী সঠিক জায়গায় রাখো, তবেই প্রকৃতির শক্তি তোমার পাশে থাকবে।
✍ সঞ্জীব বিশ্বাস
এই লেখাটির রচয়িতা হলেন শ্রী সঞ্জীব বিশ্বাস। তিনি একজন অভিজ্ঞ বাস্তু-বিশারদ এবং বহু বছর ধরে বাস্তু-পরামর্শ দিয়ে আসছেন। Botgaach.com-এর জন্য তিনি বিশেষভাবে এই তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটি প্রস্তুত করেছেন।
All images in this article are AI-generated visuals.







