সাধারণ শৈশব থেকে ভারতের “মিসাইল ম্যান”

Bangla Pulse
By -
0

 


সাধারণ শৈশব থেকে ভারতের “মিসাইল ম্যান”

ড. এ.পি.জে. আব্দুল কালাম – Missile Man of India with rocket and Indian tricolor background

আজকের আমাদের এই শক্তিশালী ভারতবর্ষের পিছনে যেসব ব্যক্তির হাত রয়েছে বলা ভালো অবদান রয়েছে, তাঁদের তিনি হলেন ড. আব্দুল কালাম। তিনি ভারতের "মিসাইল ম্যান" আবার "জনগণের রাষ্ট্রপতি" নামেও পরিচিত। তিনি শুধু একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী নয়, তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষক, স্বপ্নদ্রষ্টা এবং অসংখ্য মানুষের অনুপ্রেরণা। এখানে আমরা তুলে ধরব তাঁর তামিলনাড়ুর একটি ছোট্ট শহর থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত তাঁর যাত্রা, দৃঢ় সংকল্প, বিনয় এবং জাতির সেবায নিয়োজিত এক পুজারীর অনন্য কাহিনি।


শৈশব ও পরিবার

Young Abdul Kalam childhood in Rameswaram village, বই পড়ছে in a humble home

তার পুরো নাম আভুল পাকির জয়নুলআবেদীন আব্দুল কালাম, জন্ম: ১৫ অক্টোবর ১৯৩১ সাল, তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম নামক একটি ছোট্ট দ্বীপ শহরে। তার পিতা ছিলেন জয়নুলআবেদীন মারাক্কায়ার, তিনি পেশায় একজন নৌকা চালক ও একাধারে তিনি মসজিদের ইমামও ছিলেন। ওনার মাতা ছিলেন আশিআম্মা, যিনি একজন দয়ালু ও অতিথি পরায়ন গৃহিণী ছিলেন। ইনার পরিবার ধনী না হলেও পরিবারের মধ্যে যে সততা মূল্যবোধ ও অতিথীপরায়নতা ছিল, তার জন্য সমাজে সম্মানিত ছিল পরবর্তীকালে এই নীতিগুলোই ডঃ কালামের চরিত্র গঠনে ভূমিকা রেখেছিল।


শৈশব ও বন্ধু

Abdul Kalam young boy selling newspaper, struggle for education in Tamil Nadu

ডক্টর কালামের শৈশব ছিল সরল অথচ কষ্টময়। সংসারকে চালানোর জন্য তিনি স্কুলের শেষে সংবাদপত্রের বিলি করতেন এবং তার বাবাকেও সাহায্য করতে এত অর্থ কষ্টে থাকা সত্ত্বেও তার শেখার ইচ্ছা ও কৌতুহল কোনদিন হারায়নি। তিনি অরবিন্দন, আব্বাস আলী, শিবপ্রকাশন নামের বিভিন্ন ধর্ম সংস্কৃতি ও সমাজ থেকে আসা বন্ধুদের সঙ্গে তিনি বড় হন যা তাকে সাম্প্রদায়িক ঐক্য ও সম্প্রীতি বৈচিত্র্য ও ঐক্যের মূল্য শিখিয়েছিল।

শিক্ষাদীক্ষা

তাঁর স্কুল জীবন শেষ হয় শোয়ার্টজ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, রামনাথপুরম থেকে। তারপর তিনি পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্নাতক করেন সেন্ট জোসেফ’স কলেজ, তিরুচিরাপল্লি থেকে। এরপর তিনি মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (MIT) থেকে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রায়ই পাখির মতো আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাই তাঁর পদার্থবিদ্যা ও এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং–নিয়ে পড়াশোনা তাঁর ভবিষ্যতের বৈজ্ঞানিক জীবনের ভিত্তি তৈরি করে।

কর্মজীবন

Dr. A.P.J. Abdul Kalam with Agni missile project – ভারতের মিসাইল ম্যান

ড. কালাম প্রথমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মজীবন শুরু করেন, তিনি DRDO (Defence Research and Development Organisation)-তে কাজ শুরু করেন। এবং পরে তিনি ISRO (Indian Space Research Organisation)-তে যোগ দেন। যেখানে তিনি ভারতের প্রথম স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (SLV-III)-এর প্রকল্প পরিচালক বা প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ছিলেন, যা ১৯৮০ সালে সফলভাবে "রোহিনী" স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। এরপর তিনি দেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি যেমন অগ্নি ও পৃথ্বী-র উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এজন্যই তিনি “ভারতের মিসাইল ম্যান” নামে খ্যাত হয়ে থাকবেন সমগ্র ভারতবাসীর কাছে। এছাড়াও তিনি ১৯৯৮ সালে ভারতের পোখরানে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি- পোখরান-II পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও সুদক্ষ নেতৃত্বে প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ কর্মসূচি ভারতকে আত্মনির্ভরশীলতার দিকে নিয়ে যায়।


ভারতের রাষ্ট্রপতি

abdul-kalam-president-india

ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ড. কালাম ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সাধারণ মানুষের কাছে ছিলেন “জনগণের রাষ্ট্রপতি।” যিনি গতানুগতিক রাজনীতিবিদদের মতো না হয়ে তিনি যুবসমাজকে অনুপ্রাণিত করা, শিক্ষা প্রসার ও ২০২০ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখাতে মনোনিবেশ করেছেন।


শিক্ষক হিসেবে কালাম

People’s Teacher Dr. Kalam inspiring students with books and smiles

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব শেষ হওয়ার পরও কালাম নিজেকে প্রথমে শিক্ষক হিসেবেই পরিচয় দিতেন। এবং তিনি বিশ্বাস করতেন যে- “শিক্ষকতাই সবচেয়ে মহৎ পেশা।” এবং জ্ঞান ভাগাভাগি করার জন্য, লুকিয়ে রাখার জন্য নয়। ছাত্ররাই একটি জাতির প্রকৃত শক্তি। তিনি যখনই সময় পেয়েছেন প্রায়ই স্কুল-কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে মিশেছেন এবং তাঁদের বড় স্বপ্ন দেখতে, কঠোর পরিশ্রম করতে ও সমাজের সেবা করতে অনুপ্রাণিত করছেন।


ভারতের প্রতি অবদান

Abdul Kalam inspirational legacy – rockets, books, Indian flag & children

বিজ্ঞান ও রাজনীতির বাইরেও কালামের অবদান বিশাল— ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে শক্তিশালী করেন। গ্রামীণ উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য শক্তি ও আত্মনির্ভরশীলতার পক্ষে কাজ করেন। তিনি যুবসমাজের মধ্যে বৈজ্ঞানিক মানসিকতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা জাগিয়ে তোলেন। Wings of Fire, Ignited Minds, এবং India 2020 সহ বহু প্রেরণাদায়ক গ্রন্থ রচনা করেন।


মৃত্যু

২৭ জুলাই ২০১৫ সালে ড. কালাম যখন শিলং-এর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (IIM)-এ বক্তৃতা দিচ্ছিলেন সেই সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমন করেন এবং সেই সঙ্গে আধুনিক ভারতবর্ষের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন ঘটে। তিনি মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার কাজ করছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ গভীরভাবে শোকাহত হয়, তবে তাঁর দেখানো পথ আজও অসংখ্য মানুষের পথের দিশা দেখাচ্ছে।


ড. এ.পি.জে. আব্দুল কালামের কিছু জীবনমুখি–শিক্ষা

  • বড় স্বপ্ন দেখো: লক্ষ্য ছোট অপরাধ; মহান লক্ষ্য রাখো।
  • ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করো: ব্যর্থতা শেষ নয়, শেখার সুযোগ।
  • শৃঙ্খলা ও পরিশ্রম: সাফল্য আসে শুধু কঠোর সাধনা থেকে।
  • জ্ঞানের মূল্য দাও: আজীবন শেখা চালিয়ে যাও।
  • অন্যকে সেবা করো: নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা সমাজের কল্যাণে জন্য ব্যবহার করো।

সব শেষে এটা বলা যায় ড. এ.পি.জে. আব্দুল কালামের জীবন আমাদেরকে শেখায় কিভাবে দৃঢ়তা, বিনয় ও দৃষ্টিভঙ্গি একটি সাধারণ ছেলেকে জাতির নায়কে পরিণত করতে পারে। তাঁর গল্প শুধুমাত্র ক্ষেপণাস্ত্র বা বিজ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলোনা—এটা হল আশা, স্বপ্ন ও মানবসেবার গল্প। তিনি চিরকাল ভারতের “মিসাইল ম্যান” এবং “জনগণের রাষ্ট্রপতি” হিসেবে ভারতবাসির হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

All images in this article are AI-generated visuals.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!