ফেং শুই সম্পর্কে আপনি এটা জানতেন কি?
ফেং শুইয়ের নাম শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে লাফিং বুদ্ধার মূর্তি বা হাস্যোজ্জ্বল বুদ্ধের মূর্তি। প্রায় সবার বাড়িতে বা দোকানে আজকাল দেখা যায় এই হাসিখুশি মূর্তি। কেউ বিশ্বাস করেন এটা সৌভাগ্যের প্রতীক, আবার কেউ শুধুই শোভাবর্ধন হিসেবেই রাখেন। তবে মজার ব্যাপার হলো—অনেকে বলেন, লাফিং বুদ্ধ নিজের হাতে কিনে আনা যায় না, বরং উপহার হিসেবে পেলে তবেই এর কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এই লাফিং বুদ্ধ আসলে কে ছিলেন? চলুন একটু পিছনের কাহিনি জেনে নিই।
লাফিং বুদ্ধ আসলে কে?
অনেকে ভুল করে মনে করেন লাফিং বুদ্ধ মানেই গৌতম বুদ্ধ। আসলে তা নয়। লাফিং বুদ্ধ ছিলেন দশম শতাব্দীর এক চাইনিজ সাধু – বুডাই (Budai বা Hotei)। বুডাই সবসময় হাসিখুশি থাকতেন। তিনি দেখতে ছিলেন স্থূলকায়, ভিক্ষুকের মতো। সবসময় একটি বড় কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে ঘুরতেন। রাস্তায় ঘুরে বাচ্চাদের খেলনা ও মিষ্টি বিলিয়ে দিতেন। তার বিশ্বাস ছিল— 👉 “আসল জ্ঞান হলো খুশি ভাগ করে নেওয়া।” অধিকারভোগ ত্যাগ করে অন্যদের সুখী করা ছিল তার জীবনের মূল শিক্ষা। মৃত্যুর আগে তিনি লিখে যান— মৈত্রেয় (ভবিষ্যতের বুদ্ধ) কখনো কখনো এক হাসিখুশি মোটা সাধুর রূপে আসেন। তাহলে কি বুডাই-ই ছিলেন মৈত্রেয়? নাকি তিনি কেবল ইঙ্গিত করেছিলেন? তার সঠিক উত্তর আজও রহস্য। কিন্তু শতাব্দীর পরে বুডাই-এর হাসিখুশি রূপই পরিচিত হয় The Laughing Buddha নামে। আর এই মূর্তি ধীরে ধীরে সৌভাগ্য ও ইতিবাচক শক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে।
লাফিং বুদ্ধ মূর্তির ভঙ্গি ও তাদের অর্থ
ফেং শুই অনুযায়ী লাফিং বুদ্ধের প্রতিটি ভঙ্গি আলাদা শক্তি ও উদ্দেশ্যের প্রতীক—
- পেটে হাত রাখা: সুখ ও সাফল্য
- ভারি ব্যাগ তোলা: জীবনের কষ্ট দূরীকরণ
- হাতে পাখা: ইচ্ছাপূরণ
- শিশুদের সঙ্গে থাকা: পরিবারের আশীর্বাদ
- হাতে সোনা: ধনসম্পদ ও আর্থিক উন্নতি
বাড়িতে লাফিং বুদ্ধ বসানোর সঠিক নিয়ম (ফেং শুই টিপস)
নির্বাচন করুন
- ধন ও ব্যবসার জন্য: দক্ষিণ-পূর্ব দিক
- পরিবারের সুখের জন্য: দক্ষিণ-পশ্চিম দিক
- ক্যারিয়ার সফলতার জন্য: উত্তর দিক
- স্বাস্থ্য ও শক্তির জন্য:পূর্ব দিক
মূর্তির অবস্থান
👉 মূর্তির মুখ সবসময় ঘরের ভেতরের দিকে রাখতে হবে।
👉 প্রধান দরজা দিয়ে মূর্তি দেখা গেলে ইতিবাচক শক্তি বাড়ে।
👉 রুমের কোনায় বা ধুলো জমা জায়গায় রাখা উচিত নয়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা
লাফিং বুদ্ধের মূর্তি সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। যদি আপনার রুচি বা বিশ্বাসের সাথে না মিলে, তবে শুধু শোভামাত্র হিসেবে রাখার প্রয়োজন নেই।
উপহার হিসেবে পাওয়ার গুরুত্ব
লাফিং বুদ্ধ বাজার থেকে কিনে আনা যায়, তবে প্রচলিত বিশ্বাস হলো— 👉 উপহার হিসেবে পাওয়া লাফিং বুদ্ধই আসল কার্যকারিতা দেয়। তাই যদি কারো জীবনে সুখ ও সৌভাগ্য আনতে চান, তবে তাকে লাফিং বুদ্ধ উপহার দিন। 🎁
ভারতে ও বাংলায় ফেং শুই
চীন, হংকং ও সিঙ্গাপুরে ফেং শুই অত্যন্ত জনপ্রিয়। ভারতে শহুরে মানুষদের মধ্যে এখন ধীরে ধীরে এর প্রচলন বাড়ছে। বাংলায় এখনও তুলনামূলক কম দেখা যায়, তবে শহরের বাড়ি ও অফিসে ফেং শুই ব্যবহার এখন বাড়ন্ত প্রবণতা দেখা যায়।
শেষ কথা
লাফিং বুদ্ধ শুধুমাত্র একটি শোভাময় মূর্তি নয়। এটি হলো— ✨ ইতিবাচক শক্তি, আনন্দ ও সৌভাগ্যের প্রতীক। তবে মনে রাখবেন—মূর্তির আসল শক্তি নির্ভর করে আপনার বিশ্বাস, ইতিবাচক মনোভাব এবং নিজের প্রচেষ্টার উপর।
👉 তাহলে প্রশ্ন হলো— আপনি কি আপনার প্রিয়জনকে লাফিং বুদ্ধ উপহার দেওয়ার চিন্তা করছেন? 🎁
এই প্রবন্ধের সমস্ত ছবি এআই-জেনারেটেড ভিজুয়াল।