🧠 মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবা: আতঙ্ক, বাস্তবতা ও প্রতিরোধ
সাম্প্রতিক সময়ে “মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবা” নামটি সংবাদমাধ্যমে বারবার ট্রেন্ডিং হয়ে উঠে আসছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Naegleria fowleri। এটি এক ধরনের এককোষী জীব, যা সাধারণত উষ্ণ মিঠা জলে বাস করে, খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু একবার মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে প্রাণঘাতী সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
এ নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে কেরালায় এবং সেই প্রেক্ষিতে বাংলাতেও প্রশ্ন উঠছে— নদীতে তর্পণ বা স্নান করলে কি সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে?
❓ Naegleria fowleri কী?
এটি একটি free-living amoeba, অর্থাৎ প্রকৃতিতে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকে। সাধারণত এর বাস উষ্ণ মিঠা জলে, যেমন—
- পুকুর
- হ্রদ
- নদী
- গরম প্রস্রবণ
- অপরিষ্কার বা দীর্ঘদিন ক্লোরিন ছাড়া থাকা সুইমিং পুল
এই অ্যামিবা বিশেষভাবে thermophilic অর্থাৎ গরম জলে ভালোভাবে বংশবিস্তার করে। গবেষণায় দেখা গেছে ৩০°C–৪৫°C উষ্ণতায় এরা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
⚠️ সংক্রমণ কীভাবে হয়?
- Naegleria fowleri জলের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে, তবে শুধুমাত্র নাক দিয়ে।
- সাঁতার কাটার সময় বা ডুব দেওয়ার সময় নাক দিয়ে জল প্রবেশ করলে অ্যামিবা নাকের ভিতরের শ্লেষ্মা ঝিল্লি অতিক্রম করে।
- তারপর ঘ্রাণ স্নায়ু (olfactory nerve) ধরে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়।
- সেখানে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং Primary Amoebic Meningoencephalitis (PAM) নামের রোগ ঘটায়।
👉 গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো: পানীয় হিসেবে খেলে এই রোগ হয় না।
🩺 উপসর্গ
সংক্রমণের পর সাধারণত ১–৯ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে এটি অনেকটা ব্যাক্টেরিয়াল মেনিনজাইটিস-এর মতো।
- তীব্র মাথাব্যথা
- জ্বর
- বমি
- ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া
- বিভ্রান্তি, খিঁচুনি
- পরে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
রোগটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয় এবং কয়েক দিনের মধ্যে প্রাণঘাতী হতে পারে। মৃত্যুহার প্রায় ৯৫% এরও বেশি।
📍 কেরালার অভিজ্ঞতা
গত কয়েক বছরে কেরালায় sporadic বা ছিটেফোঁটা কেস দেখা গেছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি মাত্র দুই মাসে পাঁচটি শিশুর PAM রিপোর্ট হয়।
এ কারণে কেরালা সরকার বিস্তারিত Technical Guidelines জারি করেছে। এতে প্রিভেনশন, ডায়াগনোসিস এবং চিকিৎসার নিয়মাবলি উল্লেখ আছে।
🌡️ গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে জলের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। ফলে উষ্ণ জলাশয়ে Naegleria fowleri আরও দ্রুত বংশবিস্তার করছে। একইসঙ্গে গরমে মানুষ বেশি জলাশয়ে নামছে, ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ছে।
অন্যদিকে গবেষণায় দেখা গেছে, উষ্ণায়নের কারণে এর ভৌগোলিক বিস্তারও বেড়ে চলেছে।
🌊 গঙ্গা বা বাংলার ঝুঁকি কতটা?
Naegleria fowleri সাধারণত স্থির জল বা বদ্ধ জলাশয়ে বেশি পাওয়া যায়।
স্রোতযুক্ত নদী, যেমন গঙ্গা— সেখানে ঝুঁকি অনেক কম।
বাংলায় যে ধরনের অ্যামিবার সংক্রমণ আগে দেখা গেছে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে Acanthamoeba প্রজাতি, যা Naegleria-এর তুলনায় কম মারাত্মক এবং চিকিৎসা সঠিক হলে সেরে ওঠা সম্ভব।
তবে ঝুঁকি একেবারে নেই বলা যায় না। বিশেষ করে যদি জল নাক দিয়ে প্রবেশ করে, সতর্ক না হলে সংক্রমণ ঘটতে পারে।
🛡️ সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতিরোধ
কেরালা সরকারের স্বাস্থ্য দফতর ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক যে নির্দেশিকা দিয়েছে, তার মূল দিকগুলো হলো:
- স্থির জল এড়িয়ে চলুন
- উষ্ণ, বদ্ধ পুকুর বা লেকে ঝাঁপ দেওয়া, সাঁতার কাটা বা ডুব দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- নাকে জল ঢোকা আটকান
- সাঁতারে nose plug ব্যবহার করুন বা নাক চেপে রাখুন।
- জলকে সবসময় পরিষ্কার রাখুন
- সুইমিং পুল, ওয়াটার পার্ক, স্পা → নিয়মিত ক্লোরিনেটেড ও রক্ষণাবেক্ষণ করা থাকা উচিত।
- নাক/সাইনাস পরিষ্কারের সময় নিরাপদ জল ব্যবহার করুন
- সবসময় ফোটানো, ফিল্টার করা বা স্টেরাইল জল ব্যবহার করতে হবে।
- ট্যাপ ওয়াটার সরাসরি ব্যবহার একেবারেই নয়।
- তলদেশের কাদা নাড়াচাড়া এড়িয়ে চলুন
- অগভীর স্থানে খেলাধুলো বা কাদা নাড়াচাড়া করলে ঝুঁকি বাড়ে।
🏥 কখন ডাক্তার দেখাবেন?
যদি সাম্প্রতিক সময়ে পুকুর/নদী/পুলে স্নান করার পর নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যেতে হবে:
- মাথাব্যথা
- জ্বর
- বমি
- ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া
- এবং অবশ্যই ডাক্তারকে জানাতে হবে যে আপনি সম্প্রতি মিঠা জলে গিয়েছিলেন। এতে দ্রুত পরীক্ষা (বিশেষ করে CSF পরীক্ষা) করা সম্ভব হবে।
💊 চিকিৎসা
এই রোগটি খুবই বিরল, তবে শনাক্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।
মূল ওষুধ হলো Amphotericin B (IV ± intrathecal)।
এর সঙ্গে মাল্টি ড্রাগ থেরাপি অর্থাৎ Rifampin, Fluconazole বা Posaconazole, Miltefosine, Azithromycin ইত্যাদির সংমিশ্রণ ব্যবহার করা হয়।
সাথে steroids দেওয়া হয় মস্তিষ্কের ফোলা কমাতে।
সাপোর্টিভ কেয়ার যেমন— মস্তিষ্কের চাপ কমানো, হাইপোথার্মিয়া, স্যালাইন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ।
এখনও পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে বেঁচে যাওয়ার কেস খুবই বিরল (মাত্র ১০-১১ জন)। তাই প্রতিরোধই মূল ভরসা।
✅ সবশেষে এটা বলা যায় যে,
Naegleria fowleri একটি প্রাচীন কিন্তু বিরল অ্যামিবা। মানুষের সংক্রমণ একটি দুর্ঘটনাজনিত ঘটনা, নিয়মিত নয়।
অতএব আতঙ্ক নয়, সচেতনতা প্রয়োজন।
- নাকে জল না যাওয়া
- পরিষ্কার ক্লোরিনযুক্ত সুইমিং পুল ব্যবহার
- নিরাপদ জল দিয়ে নাক পরিষ্কার
- সন্দেহজনক উপসর্গে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া
এই কয়েকটি সহজ অভ্যাস মেনে চললে মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
এই নাকের ক্লিপটা আমরা রিভিউ করে দেখেছি ভালো, চেক করে দেখতে পারেন — সেরা ডিল পেতে নিচে ক্লিক করুন:
(এই পোস্টে অ্যাফিলিয়েট লিংক আছে — আপনার কোনো অতিরিক্ত খরচ হবে না।)
All images in this article are AI-generated visuals.